বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এখনো হার্টের রোগ। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, অনেকেই জানেন না এই মারাত্মক রোগটি বেশিরভাগ সময় নিঃশব্দে শুরু হয় শরীরের ছোট ছোট সংকেতের মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে কার্ডিওভাসকুলার গবেষক ড. জেমস ডি’নিকোলান্টোনিও বলেছেন, “এই সূক্ষ্ম ও প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে ফেলতে পারলেই বড় ধরনের হার্টের জটিলতা অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
তিনি যে তিনটি প্রাথমিক সতর্ক সংকেতের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো আমাদের দেহের নীরব বার্তা—যেগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হতে পারে।
যৌন দুর্বলতা হার্টের লুকানো ইঙ্গিত
ড. ডি’নিকোলান্টোনিওর মতে, ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা যৌন দুর্বলতা প্রায়ই হার্টের সমস্যার প্রথম ইঙ্গিত হতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “হার্টের রোগে আক্রান্ত প্রতি দুই জনের একজন যৌন দুর্বলতায় ভোগেন, এবং এটি হার্টের সমস্যার পাঁচ বছর আগেও দেখা দিতে পারে।”
এর মূল কারণ হলো, ছোট রক্তনালীতে (যেমন পেনাইল আর্টারি) রক্তপ্রবাহের সমস্যা সাধারণত হার্টের ধমনীর অবস্থার প্রতিফলন ঘটায়। তাই হঠাৎ যৌন দুর্বলতা দেখা দিলে, বিশেষত যদি জীবনযাপনের কোনো কারণ না থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সামান্য পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট
অনেকে এটিকে “ক্লান্তি” বা “ফিটনেস কমে যাওয়া” বলে উড়িয়ে দেন, কিন্তু ড. ডি’নিকোলান্টোনিও জানান, হালকা কাজের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়াও হতে পারে হার্টের দুর্বলতার সংকেত। তিনি বলেন, “কয়েক ধাপ সিঁড়ি ওঠা বা অল্প ব্যায়ামের পর যদি অস্বাভাবিকভাবে হাঁপিয়ে যান, তবে বুঝতে হবে আপনার হার্ট রক্ত পাম্প করতে কষ্ট পাচ্ছে।”
আপনি যদি প্রতিদিনের সাধারণ কাজেই শ্বাসকষ্ট টের পান—হোক সেটা সন্তানকে স্কুলে নেওয়া, অফিসে যাওয়া বা হেঁটে বাজার করা—তাহলে এটিকে অবহেলা করবেন না। এটি হতে পারে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার লক্ষণ।
পা, গোড়ালি বা পায়ের নিচে ফোলাভাব
অনেকে নতুন জুতা বা দীর্ঘ ভ্রমণকে দায়ী করেন, কিন্তু পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব কখনো কখনো হার্টের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞ জানান, “পায়ের নিচে বা গোড়ালিতে ফোলাভাব হার্ট ফেইলিউর বা কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাসের ইঙ্গিত হতে পারে। শরীরে তরল জমে থাকা আসলে হার্টের দুর্বল রক্তপ্রবাহের ফল।”
যদি এই ফোলাভাব স্থায়ী হয়, বিশেষ করে এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে আপনার হার্ট যথাযথভাবে রক্ত পাম্প করতে পারছে না।
কেন আগাম সতর্কতা জরুরি?
চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে, বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক বা ফেইলিউরের আগে হার্ট নীরব সংকেত পাঠায়। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে ফোলাভাব, ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্টকে হার্ট ফেইলিউরের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অধিকাংশ মানুষ এসব লক্ষণকে বয়স বা দৈনন্দিন ক্লান্তির ফল বলে এড়িয়ে যান। কিন্তু এই সামান্য পরিবর্তনগুলো দ্রুত চিনে চিকিৎসা শুরু করা গেলে, জীবনযাপন ও ওষুধের মাধ্যমে বড় ধরনের রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হার্টের রোগ এখন আর কেবল বৃদ্ধ বয়সের সমস্যা নয়। এটি অনেক আগেই নীরবে দেহে বার্তা পাঠাতে শুরু করে। গোড়ালির ফোলাভাব, অকারণে শ্বাসকষ্ট বা যৌন দুর্বলতা হতে পারে সেই প্রাথমিক সতর্কবার্তা। ড. ডি’নিকোলান্টোনিওর কথায়, “এই সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দিলে গল্পটাই বদলে যেতে পারে।”
অতএব, সংকেতের জন্য অপেক্ষা নয়—হার্টের ফিসফিসানি শুনে আগেভাগেই ব্যবস্থা নিন। আপনার হার্টই সেই সতর্কতার সবচেয়ে বড় পুরস্কার দেবে।
